শেয়ার বাজারে ক্ষতি এড়ানোর উপায় : ১০ বিষয় আপনার জানা দরকার

শেয়ার বাজারে ক্ষতি এড়ানোর উপায় গুলি আপনাকে জানতে হবে বিনিয়োগ করার আগে। আপনি যদি শেয়ার মার্কেট ( Share Market) থেকে লাভবান হতে চান তাহলে শেয়ার বাজারে ক্ষতি এড়াতে কিভাবে বিনিয়োগ করবেন সেই সম্পর্কে আপনার কাছে যদি পরিষ্কার ধারণা থাকে , তাহলে কখনোই আপনি শেয়ারবাজারে ক্ষতির সম্মুখীন হবেন না।

শেয়ার বাজারে ক্ষতি এড়ানোর উপায় : ১০ বিষয় আপনার জানা দরকার 

বন্ধুরা মনে রাখবেন শেয়ার বাজার ( Share Bazar) হলো একটি ঝুঁকিপূর্ণ লাভজনক ব্যবসা। ধরুন আপনার নিজের একটা ব্যবসা আছে। আপনি সেখানে নিজের টাকা ইনভেস্ট( Invest) করেছেন কিন্তু আপনার সেই ব্যবসার কিন্তু ঝুঁকি থাকতে পারে হয়তো আপনার ব্যবসাটি চলল না। বন্ধ হতেও পারে বা হয়তো আপনার ব্যবসা আগামী দিনে যতটা উন্নতি করার কথা আপনি ভেবেছিলেন সেই ভাবে উন্নতি করল না। তাহলে সব সময় একটা ঝুঁকি আপনার থেকে যাচ্ছে ঠিক একই ভাবে আপনি এখানে অন্যের বড় বড় কোম্পানির ব্যবসাতে টাকা ইনভেস্ট করছে। যারা ২০-২৫ বছর ধরে ব্যাবসা চালিয়ে আসছে সুনাম এর সাথে। তবু ব্যবসা মানেই একটা ঝুঁকি থাকবেই মনে। তাই কিছু বিষয় আছে যেগুলি আপনার জানা দরকার।

Telegram Channel  Join Now

তাই এই পোস্টে আমি শেয়ার বাজারে ক্ষতি এড়ানোর করণীয় বিষয় গুলি খুব সাধারণ ভাষায় আপনাদের কাছে তুলে ধরব। এগুলি একজন নতুন ইনভেস্টর দের অবশ্যই মেনে চলা উচিত। শেয়ারবাজারে ক্ষতি এড়াতে কতটুকু বিনিয়োগ করা উচিত সে সম্পর্কেও আমি ডিটেইলস আলোচনা করব - 

শেয়ার বাজারে ক্ষতি এড়ানোর উপায় : ১০ বিষয় আপনার জানা দরকার 

১. বন্ধু,  নিজেকে শিখতেই হবে। এর কোন বিকল্প নেই। কারণ আপনি যেমন অন্যের উপর ভরসা করে নিজের বিজনেস চালাতে পারবেন না ঠিক একইভাবে অন্যের উপর ভরসা করে অন্যের সাজেস্ট করা স্টকে বিনিয়োগ করে আপনি প্রচুর লাভবান হতে পারবেন না। আপনাকে শিখতে হবে সেই কোম্পানির বিজনেস, প্রোডাক্ট সম্পর্কে জানতে হবে তারপর নিজের মধ্যে একটা কনফিডেন্স যদি আপনি পান তাহলে আপনি বিনিয়োগ করে লং টাইম এর জন্য স্টক মার্কেটে টিকে থাকতে পারবেন। আর এসব শিখতে এক মাস ও সময় লাগে না। আর যদি নিজে শিখতে না চান, তাহলে বিকল্প মিউচুয়াল ফান্ড আছে, যেখানে রিটার্ন একটু কম হবে, কিন্তু আপনাকে মাথা ঘামতে হবে না। মিউচুয়াল ফান্ড সম্পর্কে পরবর্তী পোস্টে আলোচনা করবো। 

২. কখনো নিউজ উপর নির্ভর করে স্টকে ( Stocks) এর বিনিয়োগ করবেন না। অর্থাৎ ধরুন কোন একটি কোম্পানির শেয়ার এখন সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম এ আছে,  সবার মুখে মুখে সেই শেয়ার এর কথা সেরকম স্টকে আপনার এন্ট্রি না করাই ভালো। আর এই জন্যই ফিনান্সিয়াল নিউজ চ্যানেলগুলো থেকে আপনি দূরে থাকবেন।

৩. যে কোম্পানির শেয়ার এর দাম ওভার ভ্যালুড আছে সেরকম কোম্পানিতে সেই মুহূর্তে ইনভেস্ট ( Invest) না করাই সব থেকে ভালো। আর হাই প্রাইসে এন্ট্রি না নেওয়া ভাল, যখন মার্কেট  কারেকসন বা একটু নিচে আসবে তখন বিনিয়োগ করা সবথেকে লাভজনক। ইনভেস্ট রা সব সময় সুযোগের  অপেক্ষা করে কখন তারা ভাল শেয়ার কম দাম এ কিনতে পারবেন। 

আরও পড়ুন:

ক্লিক করুন - শেয়ার মার্কেট কি? কিভাবে শুরু করবো ?  

ক্লিক করুন - শেয়ার কেনার কত দিন পর বিক্রি করা যায় :  কখন বিক্রি করা উচিত ? 

ক্লিক করুন - শেয়ার বাজারে সর্বনিম্ন কত টাকা বিনিয়োগ করা যায় ? 

ক্লিক করুন - ভালো শেয়ার চেনার উপায় : ১৪ টি কার্যকরী টিপস 

৪. কখনো পেনি স্টকে ( Penny Stocks) ইনভেস্ট করবেন না। অর্থাৎ যেসব কোম্পানির মার্কেট ক্যাপাসিটি একদমই খুবই কম এবং যার স্টক প্রাইস ( Stock Price) ১ - ২ টাকা থেকে ১৫-২০ টাকা , এরকম ধরনের শেয়ার থেকে আপনি সবসময় দূরে থাকবেন। অনেক ইউটিউব চ্যানেল আছে যারা এরকম পেনি স্টকস সাজেস্ট করে আর আপনাকে বলবে যে এই 2 টাকার স্টকটি কিনে নিন,  কোটি টাকা বানাতে পারবেন। ভুল করেও এইসব স্টকে বিনিয়োগ করবেন না এবং সেই সমস্ত চ্যানেল থেকে দূরে থাকবেন।

৫. স্টক মার্কেটে আপনি নতুন হোন অথবা পুরানো , Intraday ও Option/Future ট্রেডিং থেকে দূরে থাকুন। মনে রাখবেন আপনি যদি দীর্ঘ সময় ধরে স্টক মার্কেট থেকে লাভবান হতে চান এবং আপনার ওয়েলথ (Wealth) কে আরো বড় করতে চান তাহলে আপনাকে এই সমস্ত শর্ট টার্ম জিনিস থেকে দূরে থাকতে হবে। এগুলি আপনার ক্যাপিটাল কে শেষ করে দিতে পারে। নতুনরা কখনো স্টক মার্কেট কে রেগুলার ইনকাম হিসেবে নেবেন না। ইউটিউব, ফেসবুক, সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনি প্রচুর এরকম ট্রেডিং এর ভিডিও, প্রফিট এর স্ক্রিনশট অনেক কিছুই দেখতে পাবেন, সেই সাথে অনেকেই এরকম কোর্স করাবে এবং বলবে ১০ হাজার টাকা দিয়ে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা ইনকাম করুন। বন্ধুরা নিজের মূল্যবান টাকাকে যদি আপনি স্টক মার্কেটে সুরক্ষিত রাখতে চান তাহলে এই সমস্ত ট্রেডিং থেকে শতগুণ দূরে থাকুন। 

৬. কয়েক বছর পর পরই শেয়ার মার্কেটে Crash পরিস্তিতি আসতেই পারে, অথবা মার্কেট কখনো কখনো ১০ থেকে ১৫% কারেকশন ও হয়। তখন আপনার পোর্টফলিও অনেকটা ডাউনে হয়তো দেখবেন এবং আপনার টাকা নেগেটিভে দেখতে পাবেন। এই সময় ভয় পেয়ে কখনো আপনার শেয়ারকে Loss এ সেল করবেন না যদি আপনার কাছে ফান্ডামেন্টলি খুবই ভালো কোম্পানি থাকে। কারণ মার্কেটে ক্রাশ হোক বা কারেকশন হোক আগামীতে সেটা রিকভার করে আবার নতুন একটা High Level ক্রিয়েট করবে।

৭. যত ভালই কোম্পানি হোক কোন একটি কোম্পানির শেয়ারে আপনার সমস্ত টাকা একসাথে বিনিয়োগ ( Invest) করে দেবেন না। ধরুন আপনার কাছে, ৩০ হাজার টাকা আছে, তাহলে ৪-৫ টি কোম্পানি তে বিনিয়োগ করতে পারেন। এর ফলে আপনার রিস্ক কমে যাবে। 

৮. আপনার পোর্টফলিওকে  ভালো করে ম্যানেজ ( Portfolio Manage) করুন। সমস্ত টাকা পুরোপুরি স্মল ক্যাপ বা মিড ক্যাপ কোম্পানিতে ইনভেস্ট করবেন না। নতুনদের জন্য বলবো,  আপনার মোট বিনিয়োগ টাকার ৫০% large Cap কোম্পানি তে বিনিয়োগ করুন, এবং ২৫% করে Small Cap ও Mid Cap এর কোম্পানি তে বিনিয়োগ করুন। 

৯. আপনার  সঞ্চয় এর সমস্ত টাকা কখনো  শেয়ার মার্কেট এ বিনিয়োগ করে দেবেন না এবং লোন নিয়ে কোনো দিন টাকা বিনিয়োগ করবেন না। আপনি সেই পরিমাণ টাকা স্টক মার্কেট এ বিনিয়োগ করুন, যেটি আগামী ৩-৪ বছরে ও আপনার জরুরী কাজ এ লাগবে না। অথবা আপনি মাসে মাসে অল্প করে করে বিনিয়োগ করতে পারেন, যে টাকা টা আপনার জরুরী কাজে লাগবে না 

১০. আপনি যদি অল্প সময়ে ১০০০০ টাকা লাগিয়ে ধনী বা কোটিপতি হতে চান, এরম ইউটিউব এর থাম্বনেল দেখে শেয়ার মার্কেটে এ এসেছেন, তাহলে আপনাকে অনুরোধ করবো, শেয়ার মার্কেট থেকে দূরে থাকুন। আগে শেয়ার বাজার সম্পর্কে শিখুন, সবকিছু বুঝুন তারপর বিনিয়োগ করুন। নইলে যে টাকা নিয়ে মার্কেট এ ঢুকে ছিলেন, সেটিও নষ্ট করে ফেলবেন। ধৈর্য আর সময় দেওয়া হলো, শেয়ার বাজারে সাফল্যের মূলমন্ত্র। 

আশা করি, সমস্ত বন্ধুরা, শেয়ার বাজারে ক্ষতি এড়ানোর সহজ উপায় গুলি সম্পর্কে বুঝতে পারলেন। এই সব বিষয় গুলি যদি আপনি মেনে চলতে পারেন, তাহলে আপনি অন্যদের থেকে আরও এগিয়ে যাবেন এবং সব সময় এর জন্যেই প্রফিটেবল থাকবেন আর আপনার Wealth কে আরো বড় করতে পারবেন।